Tuesday, October 25, 2016

নারী মস্তিষ্ক, পুরুষ মস্তিষ্ক বলে কিছু নেই

নারী মস্তিষ্ক, পুরুষ মস্তিষ্ক বলে কিছু নেই

 
(দীর্ঘদিনের ধ্যানধারণা এমনকি বহু বিজ্ঞানীর গবেষণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন ইসরায়েলের  নারী বিজ্ঞানী ডাফনা জোয়েল। এই স্নায়ুবিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখিয়েছেন, নারী মস্তিষ্ক কিংবা পুরুষ মস্তিষ্ক বলে আলাদা কিছুই নেই। বরং মানুষের মস্তিষ্ক হলো দুটোরই অন্যন্য এক মোজাইক। এ নিয়ে ২০১২ সালে টেডএক্স প্লাটফর্মে ১৫ মিনিট বক্তৃতা করেছিলেন অধ্যাপক জোয়েল। তার অনুমতি নিয়ে ওই ভাষণের লিখিত ইংরেজি সংস্করণের অনুবাদ করেছেন বিজ্ঞানকর্মী জাহাঙ্গীর সুর।)
আপনি কি জানেন, পনের মিনিটের চাপ আপনার মস্তিষ্কের বেশি কিছু অংশের লিঙ্গ (সেক্স) পুরুষ থেকে স্ত্রী কিংবা স্ত্রী থেকে পুরুষে বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ? আমিও জানতাম না। কিন্তু যখন জানলাম, মস্তিষ্ক আর লিঙ্গ নিয়ে আমরা চিন্তাচেতনাই আমূল বদলে গেল তখন।

ঘটনাটা বছর চারেক আগের। জেন্ডারের মনস্তত্ত্ব নিয়ে একটা কোর্সে পড়াব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যে কারণে প্রায় এক বছর আমি বাসাতেই ছিলাম। এ সময় আমি বইপত্র পড়েছি। পড়েছি নানান বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ। এভাবেই জানতে চেষ্টা করেছি, নারী-পুরুষ ধারণার জন্ম ও বিকাশ কীভাবে হলো।


bbbbb


আমি একজন স্নায়ুজ্ঞানী। ফলে লিঙ্গ আর মস্তিষ্কের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আমি স্বভাবতই কৌতূহলী ছিলাম। দেখলাম, অনেক মানুষের মতো বহু বিজ্ঞানীও বিশ্বাস করেন যে, মস্তিষ্কেরও লিঙ্গ আছে। এবং পুরুষ মস্তিষ্ক আর স্ত্রী মস্তিষ্ক আছে বলেই নর ও নারীর মধ্যে এত মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।


এই গল্পের নানান সংস্করণ আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণ হলো: স্ত্রী মস্তিষ্কে বড় একটা যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে। আর আছে এক মস্তবড় আবেগ কেন্দ্র। এবং স্ত্রী মস্তিষ্ক মাত্রই সহমর্মিতার আঁতুড়ঘর। অন্যদিকে পুরুষ মস্তিষ্কে আছে বড়সড় একটা যৌন কেন্দ্র। আছে বিশাল এক আগ্রাসন কেন্দ্র। এবং নীতিনির্মাণেই বিকশিত হয়েছে পুরুষ মস্তিষ্ক (বুঝতে পারছি, আপনারা কেউ কেউ অন্য কিছু ভেবেছিলেন। যা হোক, এটা তো একটা বৈজ্ঞানিক গল্প)।


এই গল্প আমাদের কী শিক্ষা দেয়? আমরা যে বিশ্বে বাস করছি তার সহজ এক ব্যাখ্যা এই গল্পে রয়েছে। এটা আমাদের বলে, কেন নারীরা আসলে বেশি সংবেদনশীল, বেশি আবেগপ্রবণ। এবং কেনই বা পুরুষেরা বেশি আগ্রাসী হয়, কেন বেশি যৌনকামী হয়। এটা আমাদের বলে, কেন শিক্ষকতায় নারীরা সংখ্যায় বেশি এবং কেন বেশিরভাগ প্রকৌশলী হচ্ছেন পুরুষ।


বলা হয়, জঠরে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে নিসৃত হয় টেস্টোস্টেরন (মূলত যা পুরুষের হরমোন), তখন নির্ধারিত স্ত্রী মস্তিষ্ক বদলে গিয়ে রূপ নেয় পুরুষ মস্তিষ্কের। সুতরাই, মেয়েরা জন্ম নেয় স্ত্রী মস্তিষ্ক নিয়ে এবং ছেলেরা জন্ম নেয় পুরুষ মস্তিষ্ক নিয়ে।


পুরুষ মস্তিষ্ক ও নারী মস্তিষ্কের এমন ধারণা জনপ্রিয় একটা মতকেও সমর্থন করে। বলা হয়, ছেলেরা মঙ্গল থেকে আর মেয়েরা এসেছে শুক্রগ্রহ থেকে। তবে নর ও নারীরা যে উল্লেখযোগ্যভাবে একই, এর পক্ষে কিন্তু এই গল্পটা কোনো বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য দেয় না।


মনোবিজ্ঞানে লিঙ্গ পার্থক্য নিয়ে বিগত ৫০ বছরে ৫০ হাজারের বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আমি সবগুলো পড়িনি। এমনকি এজন্য একটা বছর কিছুই নয়। কিন্তু অনেকে এসব পড়েছেন। এবং বহুসংখ্যক প্রবন্ধ পড়ার পরে তাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে: মনোবিজ্ঞানীরা যতভাবেই যাচাই ও তুলনা করতে চান না কেন, পুরুষ আর নারী প্রায় সবক্ষেত্রেই একই রকম। যেমন এক ধীশক্তির দিক থেকে তেমনি এক আবেগপ্রবণতায়। তারা এক ব্যক্তিত্ববোধে, কৌতূহলে এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে।


মাত্র কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে সঙ্গতিপূর্ণ লিঙ্গ পার্থক্য ধরা যায়। যেমন, সবাই নয় বরং গড়পড়তা পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে বেশি আগ্রাসী হয়। সুতরাং আগ্রাসনকে পুরুষবাচক (ম্যাসকুলাইন) বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেওয়া হয়। গড়পড়তা মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি মায়াবী, সহৃদয় হয়। সুতরাং পরদুঃখকাতরতা স্ত্রীবাচক (ফেমিনিন) বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়। এরপরও এসব ক্ষেত্রে পার্থক্যটা কিন্তু সামান্যই। দেখা যাবে অনেক পুরুষ ও নারী এসব ক্ষেত্রেও একইরকম আচরণ করে। এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা এখন বুঝতে পেরেছি প্রতিটা মানুষ হলো পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক বৈশিষ্ট্যের অন্যন্য এক মোজাইক। আমরা কেউই পুরো পুরুষপ্রকৃতির নই। আবার কেউই পুরোটা স্ত্রীপ্রকৃতির নই। আমার ধারণা, আপনারা এরই মধ্যে এই বিষয়টা জেনে গেছেন।


আপনাদের একটা পুরুষবাচক দিক রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে একটা স্ত্রীবাচক দিক।
পুরুষবাচকতা ও স্ত্রীবাচকতার এই মোজাইক নিয়ে আমি পরে কথা বলছি। তার আগে বরং মস্তিষ্কে ফেরা যাক।



উনিশ শতকের শেষদিকে, নর-নারীর মস্তিষ্কের মধ্যে একটা পার্থক্য শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। গড়ে একটা পুরুষের মস্তিষ্ক একটা নারীর মস্তিস্কের চেয়ে ভারী হয়। অনেকের মধ্যে এরকম একটা বিশ্বাস আছে, পুরুষেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়। পুরুষের ভারী মস্তিষ্কই এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে ওই বিশ্বাসের পক্ষে সমর্থন ও ব্যাখ্যা হিসেবে তথ্যটাকে কাজে লাগালেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী (থিওডর বিশচপ)। তিনি বলেছিলেন, নারীদের মস্তিষ্ক ছোট হওয়ার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ নেওয়ার মতো দরকারি বুদ্ধি ও দক্ষতা তাদের নেই।



এমন যুক্তি যদি জনপ্রিয় হয়, তাহলে এটা কিন্তু কোনো দৈব ঘটনা নয়। এটা ওই বিশ্বাসটারও মতোই যেটা দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম এই আলোচনা: নর ও নারী মৌলিকভাবেই ভিন্ন প্রকৃতির কেননা ছেলেদের আছে পুরুষ মস্তিষ্ক আর মেয়েদের আছে স্ত্রী মস্তিষ্ক।



কিন্তু এটা হলো এই মিথের পুরনো সংস্করণ। সুতরাং এটা আজ সেঁকেলে, হাস্যকর। কেননা, আজ মেয়েরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই যায় না, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রায় প্রতিটা পর্বেই ছেলেদের পিছে ফেলেছে মেয়েরা। ছেলেদের চেয়ে মস্তিষ্ক ছোট বলে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে না বিজ্ঞানীরাও এটা বিশ্বাস করতে পারেন, এটা শুনতেই হাসি পায়। না না, আমার কথায় ভুল বুঝবেন না। এখনও একথা ঠিক যে, মেয়েদের মস্তিষ্ক তুলনামূলক গড়ে ছেলেদের মস্তিষ্কের চেয়ে ছোট। যেটা বদলে গেছে তা কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কের আকার নয়। যেটা বদলে গেছে তা হলো সামাজিক আদর্শ আর আইনকানুন। বদলে গেছে সেই সব আইন যা নাকি মেয়েদের পড়ালেখা থেকে দূরে রেখেছিল। আজ বদলে গেছে সেই সব আদর্শ যা নাকি মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষায় অনুৎসাহিত করত।


vvvv
প্রাণী ও মানুষের জগতে নর-নারীর মস্তিষ্কের গঠনে কী কী পার্থক্য রয়েছে, গত একশ বছরে সেসব খুঁজে ফিরেছেন স্নায়ুবিজ্ঞানীরা। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক কর্টেক্সের (মস্তিষ্কের বহিরাবরণ) কথা। গড়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কর্টেক্স পুরু হয়। মেয়েদের মস্তিষ্কে ধূসর অংশের পরিমাণ বেশি, সাদা অংশের পরিমাণ আনুপাতিক হারে কম। আবার মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মস্তিষ্কে বড় বড় ভেন্ট্রিকল (নিলয় বা প্রকোষ্ঠ) থাকে। মস্তিষ্কের মাঝামাঝিতে এসব বিশালাকার গহ্বরগুলো থাকে।


মেয়েদের থেকে ছেলেদের মস্তিষ্ক বড় বলে যারা খুব খুশি হয়েছিলেন, তারা বোধকরি এখন হতাশ হলেন ভেন্ট্রিকল সম্পর্কে এই আবিষ্কারটার কথা শুনে। উনিশ শতকের বিজ্ঞানীদের মতো আপনিও যদি বিশ্বাস করেন যে, মস্তিষ্কের আকার একটা বড় ব্যাপার, তাহলে এটা জানা সত্যিই হতবুদ্ধিকর: মস্তিষ্ক যত বড়, তত বড় …। আমরা এটাকে বলব…, শূন্যস্থান।


bbbbbm


যা হোক, আমি বলতে চাই কি, এসব কিছুই বাজে কথা। পুরুষেরা তাদের বড় ভেন্ট্রিকলওয়ালা মস্তিষ্ক নিয়ে ভালোই আছে, ভালোই কাজ করে। ঠিক যেমনি ছোট মস্তিষ্ক নিয়ে ভালো আছে, ভালো করছে নারীরা।
ছেলে আর মেয়েদের মস্তিষ্কে যে শতশত তফাৎ আছে, আজ আমরা তা জানি। কেবলি মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্য নয়, তারতম্য শুধু মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চল নিয়ে নয়। মস্তিষ্কের অণুগঠনেও (মাইক্রোঅ্যানাটমি) অনেক হেরফের রয়েছে। এবং যত বেশি পার্থক্য ধরা পড়ছে, ততই সাধারণের এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত হচ্ছে যে, পুরুষ মস্তিষ্ক আর স্ত্রী মস্তিষ্ক বলে কিছু একটা তো আছেই।


একটা সময় আমার কাছেও এটা যৌক্তিক বলেই মনে হয়েছিল। ছেলেদের মস্তিষ্কের সঙ্গে মেয়েদের মস্তিষ্কের অনেক অমিল রয়েছে। সুতরাং, নিশ্চয়ই পুরুষ মস্তিষ্ক আর স্ত্রী মস্তিষ্ক জিনিসটাই ঠিকই। কিন্তু এই যুক্তিটা যে আসলে একটা খোড়া যুক্তি, ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি সেটা আমি বুঝতে পারলাম ওই গবেষণা প্রবন্ধটা পড়ার পর। শুরুতেই যে গবেষণার কথা আমি উল্লেখ করেছিলাম, যেটা বলছে: মানসিক চাপে মস্তিষ্কের লৈঙ্গিক পার্থক্যগুলো পুরোই উল্টে যায়। চলুন, গবেষণাটা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
মস্তিষ্কের একটা অঞ্চলের নাম হিপোক্যাম্পাস। এর ওপর মানসিক চাপের কী প্রভাব, গবেষকরা এই গবেষণায় এটাই বুঝতে চেয়েছিলেন। তারা ডেনড্রাইটের (স্নায়ুকোষের তন্তুময় ক্ষুদ্রাংশ যা তথ্য গ্রহণ করে) লোমগুলোর (স্পাইন) ঘনত্বের দিকে নজর রেখেছিলেন। নিচের ছবিতে যেমনটা আপনারা দেখছেন ছোট্ট ছোট্ট লাল বিন্দুগুলো। এখানে যে ডেনড্রাইটগুলো দেখা যাচ্ছে তা একটা পুরুষ ইঁদুর ও একটা স্ত্রী ইঁদুরের মস্তিষ্কের ডেনড্রাইট। থেকে নেওয়া।


ttt
আপনারা এখানে স্পষ্ট করে একটা লিঙ্গ পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন। যখন চাপহীন, দেখুন, তখন মেয়েদের বেলায় ডেনড্রাইটের লোমের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি। মুহূর্তটা উপভোগ করতে পারেন। আমার মনে হয়, এই প্রথম আপনারা মস্তিষ্কের মাঝে লিঙ্গ পার্থক্য দেখতে পেলেন। সুতরাং, আমরা বলতে পারি, হিপোক্যাম্পাসে ডেনড্রাইটদের একটা পৌরষ চেহারা রয়েছে যেখানে লোমের সংখ্যা বিরল। আবার একটা মেয়েলি রূপ রয়েছে, যেখানে ডেনড্রাইটের লোম ঘন।



আরেক দল ইঁদুর বেছে নেওয়া হয়েছিল এই গবেষণায়। তাদের মস্তিষ্ক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর আগে এসব ইঁদুর ১৫ মিনিট ধরে চাপগ্রস্ত ছিল। ওপরের ছবিটার ডান অংশে আপনারা একটা চাপে থাকা পুরুষ ইঁদুর ও চাপে থাকা স্ত্রী ইঁদুরের ডেনড্রাইট দেখতে পাচ্ছেন। বড়ই অদ্ভুত। দেখুন, চাপগ্রস্ত পুরুষ ইঁদুরটার ডেনড্রাইটটা সেই রূপ ধারণ করেছে যেটা আমরা আগে চাপহীন স্ত্রী ইঁদুরের বেলায় দেখেছি। অনেক লোম দেখা যাচ্ছে। একই ভাবে লক্ষ্য করুন, চাপগ্রস্ত স্ত্রী ইঁদুরটার ডেনড্রাইটের চেহারাও বদলে গেছে, এমন রূপ নিয়েছে যেমনটা আমরা চাপহীন পুরুষের বেলায় দেখেছি। মাত্র কয়েকটা লোম।
বিষয়টাকে আমরা এভাবে বলতে পারি: হিপোক্যাম্পাসে ডেনড্রাইটদের আকার লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে। এটা নারী ও পুরুষে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায়। কিন্তু এটা কেবলই লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে, এমন নয়। আপনি জানেন যে, একটা স্ত্রী ডেনড্রাইট আপনি এখন দেখতে যাচ্ছেন। কিন্তু এরপরও আপনি সঠিক অনুমান করতে পারবেন, ওই ডেনড্রাইটের গঠনটা কেমন হবে। এটা অনুমান করতে গেলে, আপনাকে এও জানতে হবে যে, এই স্ত্রীটা সর্বশেষ কোনো চাপে ছিল কি না।



সুতরাং, লিঙ্গ একটা গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কিন্তু মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটায় ডেনড্রাইটদের গড়ন নির্ধারণ করে লিঙ্গ আর চাপ বা ধকলের মিথষ্ক্রিয়া।



একটা সাদামাটা পরিবর্তন। মাত্র ১৫ মিনিটের চাপ। প্রাপ্তবয়স্ক একটা প্রাণীর মস্তিষ্কের লিঙ্গই বদলে ফেলতে পারে। এই আবিষ্কারটা আমাকে খুব অবাক করে দেয়। বুঝতেই পারছেন, আমি আরও কিছু গবেষণার খোঁজ করতে লাগলাম। এবং এরকম আরও কিছু কাজের খবর পেতে তেমন বেগ পোহাতে হলো না।


মায়ের গর্ভে শিশু চাপ অনুভব করতে পারে। জন্মের পরপরই এক ধরনের চাপের অভিজ্ঞতা হয়। আবার পরিণত বয়সেও মানসিক ধকল থাকে। এসব ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ওপর চাপ কেমন প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে বেশ গবেষণা হয়েছে। এবং এগুলোতেও মস্তিষ্কের লিঙ্গ পার্থক্য ফুটে উঠেছে।



চাপ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ের হেরফের নিয়ে কাজ হয়েছে। যেমন ইঁদুরগুলো কি আলাদা আলাদা ছিল নাকি একটা দলে রাখা হয়েছিল তাদের। কিংবা খেলার জন্য তাদের কি কিছু দেওয়া হয়েছিল অথবা হয়নি।
শুধু হিপোক্যাম্পাসই নয়, মস্তিষ্কের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের নানান হেরফের নিয়ে কাজ হয়েছে। এবং শুধু ডেনড্রাইট নিয়েই নয়, মস্তিষ্কের আরও অনেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণাগুলো হয়েছে। যেমন: মস্তিষ্কের আকার, নিউরনের সংখ্যা, ডেনড্রাই 


কিন্তু এসব গবেষণায় একটা মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এবং সেটা হলো গবেষণার ফল। যা কিছুই হেরফের করে পরীক্ষা করো হোক না কেন, দেখা যাচ্ছে, মস্তিষ্কের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যারা লিঙ্গ পাল্টে দেয়। আবার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যারা কোনো লৈঙ্গিক পরিবর্তন দেখায় না।



এখন আপনি এ প্রশ্ন তুলতেই পারেন যদি সামান্যই কোনো হেরফেরে নারীকে পুরুষে কিংবা পুরুষকে নারীতে বদলে দিতে পারে, তাহলে মস্তিষ্কের লিঙ্গ নিয়ে কথা বলার আদৌ কী অর্থ আছে? আপনি সঠিক প্রশ্নটিই তাহলে তুলেছেন। এটা অর্থহীন। মস্তিষ্কের পুরুষ ও স্ত্রী রূপ নিয়ে কথা বলাটা অনর্থক। বরঞ্চ ঘন বনাম বিরল, লম্বা নাকি বেঁটে, উঁচু নাকি নিচুÑ এসব তথ্যপূর্ণ কথা বলাই বেশি যৌক্তিক ও বিচক্ষণ হবে। তবে এখানে পুরুষ/নারী পরিভাষা ব্যবহার করছি এই কারণে যে, আমার ভাবনাটাকে যেন ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারি।



এখন আমরা কথা বলতে পারি, পুরুষ ভ্রুণ নিয়ে। জঠরে ঝাঁকে ঝাঁকে টেস্টোস্টেরন নিসৃত হলে স্ত্রী মস্তিষ্ক যে বদলে যায় পুরুষ মস্তিষ্কে, সেই কথা হোক এখন। আর যোগ হোক একটা মাত্র উপাদান, চাপ। একজন প্রসূতী মায়ের কথা কল্পনা করুন। বহু সপ্তাহ ধরে অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে তিনি কখনো কখনো মানসিক চাপে থাকেন। এবং যখন তিনি চাপে থাকেন, তার গর্ভে ভ্রুণীয় মস্তিষ্কের বেশি কিছু উপাদান তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করে। সুতরাং যখন তার ছেলেটি জন্ম নেয়, শিশুটির মস্তিষ্ক আসলে পুরুষ ও স্ত্রী মস্তিষ্কের উপাদানের একটা মোজাইক। এই মিশেলটা অনন্য, একান্ত তারই। জন্মের পর আজ পর্যন্ত যে পরিবেশে সে বেড়ে উঠছে, সেই পরিবেশ এবং তার হরমোনগুলোর মধ্যকার জটিল মিথোস্ক্রিয়াই তার মস্তিষ্কের স্বরূপ তৈরি করে।


এই একই কথা খাটে স্ত্রী ভ্রুণের বেলাতেও। তার মস্তিষ্কের স্বরূপও তৈরি হয় হরমোনের মিষোস্ক্রিয়া আর পরিবেশ দ্বারা। ছোট্ট যে মেয়ে শিশুটি জন্ম নিয়েছে, তার মস্তিষ্কও আসলে স্ত্রী ও পুরুষ মস্তিষ্কের উপাদানের এক অনন্য মোজাইক।


অর্থাৎ আমরা যে মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মেছি, তা পুরুষও নয়, স্ত্রীও নয়। এটা হলো ইন্টারসেক্স, উভলিঙ্গ। মানে, স্ত্রীবাচক ও পুরুষবাচক বৈশিষ্ট্যের একটা মিশেল। আমাদের মস্তিষ্কের প্রকৃত গড়নটা জীবনভরই বদলাতে থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বদলে যায় সে। আমরা নিজেদের এখন পৌরষ ও মেয়েলি চরিত্রের অসাধারণ এক মোজাইক হিসেবে ভাবতে পারি। আমাদের মস্তিষ্ক হলো পুরুষ ও স্ত্রী উপাদানের অদ্বিতীয় এক মোজাইক।


wwww
অনেক মানুষ মনে করে, পুরুষ মস্তিষ্ক আর স্ত্রী মস্তিষ্ক বলে কিছু আছে। তারা এমনটা বিশ্বাস করে, কারণ তারা ব্যাখ্যা খোঁজে: কেন ছেলে আর মেয়েতে এত পার্থক্য, কেন তারা ভিন্ন ভিন্ন আচরণ দেখায় এবং কেনই বা তাদের ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখা হয়। আমি আপনাদের আজ এটাই দেখালাম যে, মস্তিষ্কের লিঙ্গ নিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ নেই আসলে। মস্তিষ্কের কোনো লিঙ্গ হয় না। কিন্তু যদি আপনি মস্তিষ্কের লিঙ্গ নিয়ে কথা বলতেই চান, তাহলে এটা হলো ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ। অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই ধরনের বৈশিষ্ট্যের মিশেল হলো মস্তিষ্ক।


পুরুষ মস্তিষ্ক বলে কিছু নেই। স্ত্রী মস্তিষ্ক বলে কিছু নেই। সুতরাং এরা নারী ও পুরুষের মধ্যকার মৌলিক তফাৎ ব্যাখ্যা করতে পারে না। তবে এটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয় নয় মোটেও। কারণ, পুরুষ আর নারী অনেক দিক থেকেই একই রূপ, অভিরূপ।



 

Tags:

0 Responses to “নারী মস্তিষ্ক, পুরুষ মস্তিষ্ক বলে কিছু নেই”

Post a Comment

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Shotter sondhane bd news 24. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks