Friday, October 21, 2016

ঋণাত্মক অবস্থায় ১৬ ব্যাংক ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি নাজুক

ঋণাত্মক অবস্থায় ১৬ ব্যাংক
ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি নাজুক
দেশে কার্যরত ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে প্রায় দেড় ডজন ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি নাজুক- যা মোট ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। এরই মধ্যে ১১ ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বাকি ৫টির কোনোটির ১ শতাংশ, কোনোটির ৩ শতাংশের নিচে নেমে গেছে এ প্রবৃদ্ধি।
 

এছাড়া ৯টি ব্যাংকের বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে কিছু ব্যাংকের কমেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল হতে পারে। তারা ব্যয় সামাল দিতে আমানত সংগ্রহ কম করে থাকতে পারেন।
 

আমানত প্রবৃদ্ধির এ ধারায় ব্যাংকিং খাতে সংকট বাড়ার আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে দেশে কোনো হরতাল, অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি নেই। এরপরও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো তহবিল পরিচালন ব্যয় কমাতে আমানতের সুদ হারও অব্যাহত হারে কমিয়েছে। তবে, এ সময় যৌক্তিক হারে কমায়নি ঋণের সুদ হার।

বলা চলে আমানতের হার কমাতে কমাতে এখন ব্যাংক রেট অর্থাৎ ৫ শতাংশের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। এরই প্রভাবে ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধিতে নাজুক অবস্থান এসেছে।
 
 

এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হাফিজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক বিবেচনায় আমানতের প্রবৃদ্ধি ভালো। তবে কয়েকটি ব্যাংক নেতিবাচক ধারায় আছে। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। এসব অর্থ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। কেউ সাহস পাচ্ছে না নতুন বিনিয়োগে হাত দিতে। সে কারণে ব্যাংকগুলো আমানত গ্রহণে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এসব অর্থ গ্রহণে একটা খরচ আছে। গৃহীত অর্থের বীমা করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে সিএলআর ও এসএলআর বাবদ দায় মেটাতে হয়। সর্বশেষ বিনিয়োগ না থাকায় টাকা খাটাতে হয় কলমানি মার্কেটে। কলমানিতেও মুনাফা হচ্ছে না।
 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বিনিয়োগের এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। কারণ, ব্যাংকগুলোর চলমান ব্যয় কমছে না। বরং বিনিয়োগ স্থবিরতায় আয় কমে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাচ্ছে।
 

আমানতের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অবকাঠামো সুবিধার অভাবেই মূলত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছেন না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঠিকই আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত নিচ্ছে। বিনিয়োগ করতে না পারায় অনেকেরই বিনিয়োগযোগ্য তহবিল পড়েছিল। বাধ্য হয়ে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে কেউ কেউ।
 

কিন্তু সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকৃত আয় তুলনামূলকভাবে কম। এতে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। এক সময় ১০০ টাকা আমানত নিতে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ব্যয় করত ব্যাংকগুলো, এখন তা সর্বোচ্চ ৭ টাকায় নেমে এসেছে।
 

এ সুযোগে ব্যাংকে নতুন করে আমানত আসা কমে গেছে। আবার কেউ কেউ আমানত তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে রেকর্ড হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) ব্যবধানে রেকর্ড অর্থাৎ সাড়ে ৬৮ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে এ খাতে। আর গত এক মাসেই (আগস্টে) বেড়েছে ৬২ শতাংশ। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে।
 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরকারি ব্যাংক একটি, ৭টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৩টি বিদেশী ব্যাংক রয়েছে। ৩৩ শতাংশের নিচে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এমন ৫ ব্যাংকের মধ্যে ১টি সরকারি, ৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ও ১টি বিদেশী।
 

একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, ব্যাংকে নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। যেটুকু হচ্ছে তা চলমান বিনিয়োগ। অর্থাৎ চালু কলকারখানায় কাঁচামাল আমদানিসহ চলতি তহবিল সরবরাহ করা। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ঋণ আদায় আরও কমে যাচ্ছে। এমনিতেই ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থবিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ঋণ খেলাপি হয়ে গেছেন।
 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে গেছে।
 

এদিকে ঋণ খেলাপি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরাও বিপাকে পড়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপি হলে নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকেরই ব্যবসায়-বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনের নামে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ৫০০ কোটি ও এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণ খেলাপিদের। ৫০০ কোটি টাকা ও এক হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ খেলাপিদের ২ শতাংশ ও এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। একই সঙ্গে সুদের হারের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। 

Tags:

0 Responses to “ ঋণাত্মক অবস্থায় ১৬ ব্যাংক ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি নাজুক”

Post a Comment

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Shotter sondhane bd news 24. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks