Tuesday, October 18, 2016
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্বব্যাংক-টিআই
Tuesday, October 18, 2016 by Unknown
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্বব্যাংক-টিআই
ভবিষ্যতেও কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তা মেনে নেবে না
তারা আরও বলেন, দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতুতে ঋণ দেয়া থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তবে অন্য অনেক প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে। ভবিষ্যতেও কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তা মেনে নেবে না প্রতিষ্ঠানটি। তাদের মতে, প্রেসিডেন্ট সফর করেছেন বলেই বিশ্বব্যাংক নৈতিক ও কাঠামোগত অবস্থানে পরিবর্তন আনবে এমনটি ভাবা উচিত হবে না।
জানা গেছে, ২ দিনে বাংলাদেশ সফরকালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম তার বক্তব্যে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চান তারা। এসব ইস্যুর মধ্যে রয়েছে- শক্তিশালী সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
এদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন হোসে কার্লোস উগাজের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কার্যকরভাবে দুর্নীতি দমনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার। প্রধানমন্ত্রীও সোচ্চার। এসব ক্ষেত্রে চুপ থাকা ঠিক নয়। প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেন, এনজিওগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, গুম-খুনের বিরুদ্ধে কথা বলে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করে। এখন আইনের মাধ্যমে যদি তাদের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা থাকে তাহলে দেশে আইনের শাসনের বিপর্যয় ঘটবে। এ রকম আইনের প্রয়োজন নেই। সাংবিধানিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু দুর্নীতি, গুম-খুন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করলে সরকারের কোনো লাভ হবে কিনা, সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয়, কোনো লাভ হবে না বরং তা খারাপ হবে। এজন্য টিআই প্রধানের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অনেক ভালো কাজ করছে। তারা বলেছেও, তারা সরকারের শত্র“ নয়। দুর্নীতি দমনে তারা সরকারকে সহায়তা করতে চায়। কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম নিতে আজও সক্ষম হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সারা বিশ্বেই বিশ্বব্যাংক সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে। ফলে দুর্নীতির ব্যাপারে শক্তিশালী অবস্থান সব সময়ই ছিল, এখনও আছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও সুশাসনের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান এখনও ঠিক আছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যে কারণে পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল হয়েছিল, তা হল দুর্নীতি। আর দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ছাড় দেবে, তা বলা যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সফর এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। পদ্মা সেতু নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তা কেটে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছে। আরও অনেক দিন এসব কথা বলতে থাকবে। তারমতে, বিশ্বব্যাংকের এসব কথা বলার বাস্তব কারণ আছে। এর বাইরেও অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছুটা রাজনৈতিক, কখনও তাদের নীতিগত অবস্থান এবং অথবা অন্য কারণ থাকতে পারে। ওইসব কারণের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। ফলে এতটুকু বলা যায়, দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে বিশ্বব্যাংক আগের অবস্থানেই আছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সফরে নতুন যা পাওয়া গেছে তা হল- শিশুদের পুষ্টির জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ। এ ঋণ ছাড় করা হলে বাংলাদেশের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে। এর বাইরে অন্যান্য প্রকল্পে যেসব ঋণের প্রতিশ্র“তি ছিল তা প্রেসিডেন্ট আসার আগের। ফলে নতুন করে খুব বেশি কিছু পাওয়া গেছে, এমনটি বলা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের জোর আপত্তি ছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রকল্পটিতে দুর্নীতি হয়েছে। ফলে ঋণ বাতিল করেছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে অন্য প্রকল্পগুলোর ঋণ বাতিল হয়েছে, এমন নজির পাওয়া যায়নি। তবে দুর্নীতি ও সুশাসনের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি তাদের আগের অবস্থানে বহাল আছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচন নিয়ে কাজ করতে প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসেছেন। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট আসার যুক্তিও রয়েছে। ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে বাজারটি অনেক বড়। এ কারণে বিশ্বব্যাংক বাজারটি হাতছাড়া করতে চাইবে না। পাশাপাশি তাদের নীতি ও কাঠামোর বিরুদ্ধে ছাড় দেবে, এমনটাও বলা যাবে না। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দেশের সুশাসনের কথা বলেছেন। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং মানসম্পদ উন্নয়নের কথা বলেন। এর আগেও এসব কথা বলেছেন। তার মানে হল, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাপারে একেবারে অবস্থান পাল্টে ফেলেছে, এমনটি বলা যাবে না। তবে এতটুকু বলা যায়, প্রেসিডেন্টের সফরের পর ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলোয় ঋণ পেতে সমস্যা হবে না।
পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অনেক অর্জনের মূলে বিশ্বব্যাংকের অবদান রয়েছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ খাতে ৪৫ বছরে বিশ্বব্যাংকের ব্যাপক অবদান রয়েছে। সেটা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তারমতে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সফর বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে মাইলফলকের স্বীকৃতি। পাশাপাশি আগামী দিনে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। কারণ আমাদের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হচ্ছে। এখন বাংলাদেশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল নয়, তবে প্রয়োজন রয়েছে।
Tags: International
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Responses to “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্বব্যাংক-টিআই ”
Post a Comment