Tuesday, October 18, 2016
৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি
Tuesday, October 18, 2016 by Unknown
মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে এনবিআর
৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি!
*গ্রামীণফোনের
কাছেই রাজস্ব দাবি ২ হাজার কোটি টাকার বেশি *কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আয়ের
তথ্য গোপন, যন্ত্রপাতি আমদানি বা অবচয়ের মিথ্যা তথ্য প্রদান ও সিম
পরিবর্তনের নামে কর ফাঁকির অভিযোগ *আপিলের সুযোগে রাজস্ব পরিশোধ ঝুলে আছে
বছরের পর বছর
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করলেও
বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে,
রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য মুনাফা করা সত্ত্বেও কেউ কেউ বছরের পর বছর লোকসান
দেখিয়ে যাচ্ছে। লোকসান দেখানোর জন্য বেশকিছু কৌশলও খাটানো হয়। অপারেটরগুলো
বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির নামেও অস্বাভাবিক বাড়তি খরচ দেখাচ্ছে।
প্রকৃত আয়ের তথ্য গোপন করা হয়। আবার অবচয়ের হিসাবেও ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। গত
কয়েক বছর ধরে এ ধরনের বেশকিছু ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
কোম্পানিগুলোর কাছে এনবিআর এসব রাজস্ব দাবি করলেও এনবিআরের আপিল
ট্রাইব্যুনাল বা উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর এসব অর্থ
পরিশোধের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। ফলে সরকার সঠিক সময়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে।
এনবিআর এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোবাইল
কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের দাবিনামা জারি করেছে।
এর মধ্যে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের বিরুদ্ধে সিম পরিবর্তনের
নামে নতুন সিম বিক্রির মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ (বর্তমানে আপিলাত
ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন) রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে
এককভাবে গ্রামীণফোনেরই এক হাজার দুশ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের
সিম বিক্রিকালে আদায়কৃত অর্থ খরচ হিসেবে বলা হলেও তা অনুমোদন দেয়নি বৃহত্
করদাতা ইউনিট বা এলটিইউ। এলটিইউ মনে করছে, এটি গ্রামীণফোনের প্রাপ্তি। সে
হিসেবে ওই অর্থ আয়করযোগ্য। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাদের কাছে এ বাবদ ৯শ
কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। এ দাবির বিরুদ্ধেও আপিল করেছে গ্রামীণফোন।
আবার একাধিক মোবাইল ফোন কোম্পানির প্রদর্শিত আয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে
এনবিআর। একটি মোবাইল ফোন অপারেটর যে আয় দেখিয়েছে, এনবিআরের প্রাক্কলন
অনুযায়ী আয় হয়েছে তার চাইতে বেশি। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে এ
প্রক্রিয়ায় কর ফাঁকির অভিযোগ এনে এনবিআর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দাবি
করেছে। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি আমদানি কিংবা অবচয় হিসেবে
দেখানো খরচের তথ্যও সঠিক নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এনবিআর মনে করছে, রাজস্ব
ফাঁকি দেওয়ার জন্যই বাড়তি খরচ কিংবা অবচয়ের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের
ছোট-বড় বিভিন্ন অঙ্কের খচরের হিসাব অনুমোদন না দিয়ে তার ওপর প্রযোজ্য
রাজস্ব পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এনবিআরের দাবিকৃত রাজস্বের
পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আরো কিছু
ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে এনবিআর মনে করছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয়
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ওই করও পরিশোধের দাবি করা হবে। এ দাবিনামাও হাজার
কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে এনবিআর মনে করছে।
সংশ্লিষ্ট
সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের দাবি করা যে কোনো রাজস্ব কিংবা সিদ্ধান্তের
বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে করদাতার। সেই সুযোগ নিয়ে মোবাইল ফোন
কোম্পানিগুলো আপিল করছে। বিশাল অঙ্কের রাজস্ব বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে। এর
ফলে একদিকে সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে
রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
নাম প্রকাশ
না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, দেশে
বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করে এলেও একটি কোমপানি বাদে বাকি মোবাইল ফোন
কোম্পানিগুলো এখনো লোকসান দেখাচ্ছে। কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৌশলে কাজটি
করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং কারিগরি ও প্রযুক্তিগত
দক্ষতার ঘাটতির কারণেও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সব ধরনের ফাঁকি উদ্ঘাটন করা
যাচ্ছে না।
সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে কর ফাঁকি
সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে ফাঁকি দেওয়া (এনবিআরের দাবি অনুযায়ী) আড়াই হাজার
কোটি টাকার ইস্যুটি হাইকোর্ট ঘুরে বর্তমানে এনবিআরের আপিলাত ট্রাইব্যুনালে
বিচারাধীন রয়েছে। অভিযুক্ত চারটি কোম্পানি দাবিকৃত ভ্যাটের ১০ শতাংশ বা
প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করে ওই ট্রাইব্যুনালে আপিল
করেছে। বর্তমানে এর শুনানি চলছে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোবাইল
ফোন কোম্পানিগুলো সিম রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেওয়া পরিসংখ্যান গ্রহণ করেনি
এনবিআর। এনবিআরের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো সিম রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেখালেও এর
সপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি। কোম্পানিগুলো সিম বিক্রিকে সিম
রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেখিয়ে মূলত ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
নতুন সিম বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে
হয়। কিন্তু সিম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ ধরনের অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।
সাধারণত, গ্রাহকের সিম নষ্ট হলে, চুরি কিংবা হারানো গেলে একই নম্বরের
বিপরীতে আরেকটি সিম দেওয়া হয়। এটি সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্ট নামে
পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্যই চারটি ফোন কোম্পনি নতুন
সিম বিক্রিকে সিম পরিবর্তন হিসেবে দেখিয়েছে। শুরুতে এনবিআর চারটি কোম্পানির
কাছে প্রায় তিন হাজার একশ কোটি টাকা দাবি করে। তবে প্রকৃত অর্থের পরিমাণ
নির্ধারণের লক্ষ্যে পরবর্তী সময়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।
দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে কমিটির সিদ্ধান্তেও এনবিআরের শুরুতে দাবিকৃত অর্থের
প্রায় সমান হয়। অবশ্য অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ ও বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে
এনবিআর চারটি কোম্পানির কাছে চূড়ান্তভাবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার
দাবিনামা জারি করে। এর মধ্যে এককভাবে গ্রামীণফোনের কাছেই এক হাজার দুশ কোটি
টাকার বেশি।
Tags:
Bangladesh
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Responses to “৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি”
Post a Comment