Saturday, October 22, 2016
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে
Saturday, October 22, 2016 by Unknown
রিজার্ভ ব্যয় হবে মেগা প্রকল্পে
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে
অবশেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রিজার্ভের
টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে বড় প্রকল্পে খাটানোর রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে
‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ নামের একটি ফান্ড গঠনের আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ
ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীকে প্রধান করে এ সংক্রান্ত ১৪
সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ
পালকেও কমিটির সদস্য করা হয়েছে। ওই কমিটি মনে করছে, কোনো বিশেষ তহবিল গঠন
করে রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন বড় প্রকল্পে খাটানো যেতে পারে।
জানতে চাইলে ড. বিরূপাক্ষ পাল যুগান্তরকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা
অনুযায়ী একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনা
চালিয়ে যাচ্ছে। তবে রিজার্ভের অর্থ দেশের উৎপাদনশীল ও অবকাঠামো খাতে খাটানো
হবে বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন
ডলার। যা প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই
পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা বেশি। ফলে অলস ফেলে রাখার চেয়ে রিজার্ভ
অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি
এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের পরিকল্পনার কথা
জানান। এ সময়ে তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, সে
বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। এর আগে ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির
অন্য সদস্যরা হলেন- অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত
সচিব এআরএম নজমুস ছাকিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত
সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের
(বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স
রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত
মহাব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানসহ আরও অনেকে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে কমিটির
দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জানতে চাইলে কমিটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা শুক্রবার
যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো ফান্ড গঠন করে রিজার্ভের টাকা নেয়া যেতে পারে।
বন্ড ইস্যু করে এ টাকা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ তহবিল গঠন করে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ স্টেক নিতে
পারে। এটা সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে নেয়া সম্ভব। এ অর্থের সেবা চার্জ হতে
পারে অন্যান্য প্রাইভেট সেক্টরের মতো। এভাবে রিজার্ভের অতিরিক্ত বিশ্বের
অনেক দেশে বিনিয়োগের নজির রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এসব কিছু তদারকির জন্য
একটি স্বাধীন বোর্ড গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশ
ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত
রিজার্ভের টাকা প্রকল্পে ব্যবহার হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে কোন
প্রক্রিয়ায় করা হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। হঠাৎ প্রয়োজন হলে তখন কী করবে।
দীর্ঘমেয়াদি না স্বল্পমেয়াদি, দেশীয় মুদ্রায় নাকি বিদেশী মুদ্রায়, সুদহার
কত হবে; সব মিলিয়ে অনেক ভেবে-চিন্তে কাজটা করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সরকার মোট ১০টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘মেগা প্রকল্প’। পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনালও রয়েছে এসব প্রকল্পের মধ্যে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সাধারণত সরকারি অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন মাত্রার সুদে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। বিদেশীদের কাছ থেকে এসব ঋণ নিতে বিভিন্ন ধরনের কঠিন শর্তও মানতে হয় সরকারকে। তাই এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার উদ্বৃত্ত রিজার্ভ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। কমিটির অপর সদস্য ও বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, রিজার্ভের অর্থ মেগা প্রকল্পে খাটানোর বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কীভাবে এ অর্থ কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটির দু’টি বৈঠক হয়েছে। প্রথম বৈঠকে ড. আহসান এইচ মনসুর একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Responses to “সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে”
Post a Comment