Saturday, October 22, 2016
অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ছে
Saturday, October 22, 2016 by Unknown
অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ছে
বিশ্বের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। একই সঙ্গে এককেন্দ্রিক
অর্থব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে
বাংলাদেশ। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র
ইউরোপীয় জোটের যে আধিপত্য ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে চীন, রাশিয়া, জাপান
এবং ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
আমদানি-রফতানি এবং রেমিটেন্স, প্রকল্প সহায়তায় বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, সরাসরি
বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণসহ সবকিছুতেই রয়েছে এ
প্রবণতা। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্বব্যাংকের
প্রেসিডেন্টের সফরের পর তা আরও পরিষ্কার হয়েছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছরে
অর্থনীতির আকারও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট, গত দুই বছরে বিশ্ব
অর্থনীতিতে ১৪ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে
বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক হলে ইতিবাচক।
তবে সফরকারী দেশগুলোর সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার সফল বাস্তবায়ন জরুরি।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা
আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কয়েকটি খাতে সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বিশেষ করে
চীনের প্রেসিডেন্ট বিশাল আকারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও
বিপুল অংকের ঋণের প্রতিশ্র“তি রয়েছে। এই প্রতিশ্র“তি কতটা বাস্তবায়ন হয়, তা
দেখার বিষয়। কারণ জাপানের প্রেসিডেন্ট এসে যে বিনিয়োগের প্রতিশ্র“তি
দিয়েছিলেন, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তার মতে, অর্থনীতিতে নেতিবাচক দিক
রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের রেমিটেন্স আহরণের দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও রফতানি আয় এবং বিনিয়োগেও দেশটির একক অবদান রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স ও বিনিয়োগ কমছে। বিপরীতে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং ১৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশকে ৩ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের খাতে ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং শিশুদের জন্য পুষ্টি খাতে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অবদান রয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাংকের যে সংস্থা থেকে দরিদ্র দেশগুলোকে সহজে ঋণ দেয় তার নাম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বা আইডিএ। এ বড় প্রকল্পের ৪টি বড় দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং জাপান।
এছাড়া গত বছর বাংলাদেশ সফর করেন জাপানের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে। এ সফরে বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়। একই সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি আদানি ৮ বিলিয়ন ডলার এবং রিলায়েন্স ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। এছাড়াও দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে রাশিয়া। রূপপুরে এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুই ধাপে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে দেশটি। আরও কয়েকটি প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে দেশটি।
জানা গেছে, বিশ্বের যে কোনো দেশের অর্থনীতিকে মূল্যায়নের মাপকাঠি হল জিডিপি। দুটি পদ্ধতিতে জিডিপির আকার মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হল- চলতি মূল্যের ভিত্তিতে (বেইজ অন কারেন্ট প্রাইস) এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (বেইজ অন পারসেজ পাওয়ার)। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে দেশের জিডিপি ২০৫ বিলিয়ন ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর অর্থনীতির যে অংশ বিদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তার আকার ১০৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আমদানি ৪২ বিলিয়ন ডলার, রফতানি ৩৪ বিলিয়ন, রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন, এফডিআই ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন, বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ ৭ বিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছরে প্রকল্প সহায়তায় বিদেশী ঋণ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন, অনুদান দশমিক ৫৪ বিলিয়ন এবং শেয়ারবাজারের মাধ্যমে পোর্টফোলিওতে বিদেশী বিনিয়োগ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে এনজিও ব্যুরো এবং বেপজার মাধ্যমে কিছুটা বিনিয়োগ এসেছে।
এদিকে বিশ্বের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অর্থনীতির আকারও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস ডাটাবেইস অনুসারে বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে তা ৩৩তম। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে চলতি বাজারমূল্যে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ২০৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে জিডিপির আকার ৫৭২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রথম অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ১৮ হাজার ১২৪ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের জিডিপি ১১ হাজার ২১১ বিলিয়ন ডলার।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশে অব্যাহত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাজেট সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্প ঋণ ও অনুদান দুটিই বাড়ছে। তিনি বলেন, আগামীতে এ সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়বে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Responses to “অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ছে”
Post a Comment